আজ সোমবার, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এই মহামারিতে পত্রিকার হকারের খবর কেউ রাখে না

বিপ্লব হাসান : নারায়ণগঞ্জ জেলায় করোনা ভাইরাস প্রার্দুভাবে কমে গেছে পত্রিকা বিক্রি। এই বাস্তবতায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পত্রিকা হকারদের। আয় কমে এসেছে প্রায় আশিভাগ,দুশ্চিন্তায় কপালে ভাজ পড়েছে তাদের । সব মানুষের খবর রাখেন কিন্তু পত্রিকার হকারের খবর কি কেউ রেখেছেন? তাদের এখন পত্রিকা কম বিক্রি হয় তবুও পেটের জ¦ালায় পত্রিকা নিয়ে বের হয় হকাররা। পত্রিকা ও পত্রিকার খবরের গুরুত্ব থাকলেও যারা মানুষের হাতে হাতে এসব পত্রিকা পৌঁছে দিচ্ছে তাদের গুরুত্ব তেমন নেই। এই দুঃসময়ে তাদের সম্বন্ধে ভাবার জন্য নাই পাঠকের সময় নাই পত্রিকার হকার সমিতির সময় নাই পত্রিকার মালিক পক্ষের সময়। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে সবার দুয়ারে দুয়ারে আসে খবরের কাগজ। হকারদের নেই পিপি ও মাস্ক কিংবা হ্যান্ড ওয়াস তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন পত্রিকা। পাঠক তার পছন্দের পত্রিকাটি অন্তত পাঁচ টাকার বিনিময়ে সারা পৃথিবীর খরব পেয়ে যায় নিমিষেই হাতের নাগালে। একটা পত্রিকার দাম যদি পাঁচ টাকা হয় তবে হকার পাঁচ টাকা বিক্রি করে পত্রিকার এজেন্ট এবং এজেন্ট পত্রিকার মালিককে দিয়ে কত টাকা হকার পায়? সে ক্ষেত্রে একজন হকার অবশ্যই নিরীহ মানুষ। যার অঢেল টাকা কামানোর পথ নাই বলেই পত্রিকা বিক্রি করার জন্য নেমে যায়। হকারের সামর্থ নেই একটি পিপি এবং মাস্ক কিংবা হ্যান্ড ওয়াস কিনার। প্রতিদিন হকারদের নগদ টাকায় পত্রিকা কিনে বিক্রি করতে হয়। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ হাট-বাজার ও মার্র্কেটের দোকানগুলোতে মাসিক টাকায় দৈনিক পত্রিকা দেয়া হয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পুরো নারায়ণগঞ্জ এখন লকডাউন। আর লকডাউন থাকায় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ হাট-বাজার ও মার্র্কেটের দোকানগুলোও বন্ধ থাকায় হকারদের মাসিক পাওনা টাকা পড়ে রয়েছে তাদের হাতে। এখন হকাররা টাকার অভাবে বেশি করে পত্রিকাও কিনতে পারছে না অন্যদিকে সবকিছু বন্ধ থাকায় পত্রিকা বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়াও তারা কোনো সরকারি অনুদান পাচ্ছে না। যেন করোনা ভাইরাস তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পত্রিকা বিক্রেতা আল আমিন বলেন,আমার লাইনে প্রতিদিন তিনশ পত্রিকা বিক্রি হইতো। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো ইনকাম থাকতো। কিন্তু এই মাসে ২ হাজার টাকার পত্রিকাও বিক্রি করতে পারি নাই। বাকিদেরও একই অবস্থা। বড় এই আর্থিক ক্ষতিতে আগামী মাসের বাসা-ভাড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনযাপনের ব্যয়ের বাকি সব কিছু অনিশ্চয়তা ডুবে আছে বলে জানান আল আমিন। বর্তমানে সে সংখ্যা পঞ্চাশে নেমে এসেছে। বিক্রি কমে গেছে প্রায় আশি শতাংশের বেশি। আল আমিনের মতো অন্যদের অবস্থাও একই। আতাবুদ্দিন বলেন, আগামী মাস চলমু কেমনে আল্লাহ জানে। ‘পত্রিকার হকারদের খবর কেউ রাখে না’ বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।মিজান নামের এক হকার বলেন, ‘মানুষ পত্রিকায় খবর দেখে। সবার কাছে পত্রিকা ’ খবরের গুরুত্ব আছে। কিন্তু আমরা পেপারওয়ালা তো, আমাদের কোনো গুরুত্ব নাই। করোনাভাইরাস আসার পর থেকে কেউ বাসায় ঢুকতে দেয় না। আমরাও পত্রিকা দিতে পারি না।’ পত্রিকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না, বিষয়টি আরো আগেভাগে গণমাধ্যমে প্রচার করা দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘পত্রিকায় লেখা হয়েছে, পত্রিকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। কিন্তু তাও অনেকের মধ্যে সন্দেহ আছে। ভয় আছে। এই লেখাটা আরও আগে লেখা উচিত ছিল। তাইলে আমাদের এতো ক্ষতি হইতো না।